গাঙ্গয়ে অববাহিকায় অবস্থিত দ্বীপ জেলা ভোলা। ভোলার আদি নাম ছিল দক্ষিণ শাহাবাজপুর। এ অঞ্চল এককালীন সুবে বাংলার অন্তর্গত থাকাকালীন সম্রাট আকবর এর সাবেক সেনাপতি শাহাবাজ খানের সুবেদারীর আমলে এই নামকরণ করা হয়। এই নামেই ১৮৪৫ সালের দিকে ভোলা গাজী নামে এক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি বেতুয়া নদীতে খেয়া নৌকার মাধ্যমে যাত্রী পারাপার করতেন। ভোলা গাজী পাটনী নামেই সে সমধিক পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এই ব্যক্তির খেয়ায় পারাপার হতেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ভোলা গাজীর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের নাম হয় ভোলা। দেশের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ ভোলা জেলা একদা বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা ছিল। ১৮৫৪ সালে ভোলা মহকুমায় উন্নীত হয়। ১৪০ বছর পর ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলার মর্যাদা লাভ করে। ১৯২০ সালের ১০ অক্টোবর ভোলা পৌরসভা গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালের মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ অনুযায়ী পৌরসভা “টাউন কমিটি” নামে অভিহিত ছিল। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ২০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে The Bangladesh Local Council and Municipal Committee (Amendment) Order অনুযায়ী ভোলা টাউন কমিটি পুনরায় ভোলা পৌরসভা নামে অভিহিত হয়। মহকুমা হওয়ার প্রায় ১৪০ বছর পর ১৯৮৪ সালে ভোলা জেলায় উন্নীত হয়।
১৯৮৯ সালের ৩ মে ভোলা পৌরসভা “ক” শ্রণেীর মর্যাদা লাভকরে। ভোলা পৌরসভার আয়তন ৩১.৪৮ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৬২,১৩৯। পৌরসভায় ৯ টি ওয়ার্ড বিদ্যমান। জেলা সদরে অবস্থিত ভোলা পৌরসভা ২২'-৩২’’ হতে ২২’-৫২’’ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০’-৩২’’ হতে ৯০’-৪৪’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ভৌগলিক সীমা রেখার মধ্যে অবস্থিত। ভোলা পৌর এলাকার উত্তরে বাপ্তা ও ধনিয়া ইউনিয়ন, দক্ষিণে বাপ্তা ও আলীনগর ইউনিয়ন, পূর্বে শিবপুর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে বাপ্তা ইউনিয়ন অবস্থিত। মেঘনা ও তেতুিলয়া নদী বিধৌত ভোলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ছোট ছোট চরাঞ্চলে সৃজিত বনায়ন এবং সেখানে বসবাসরত চিত্রা হরিণ, মৎস্য শিকারপরিব্রাজী বিচিত্র পাখি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে। বর্তমানে অল্প কিছু শিল্প কারখানা থাকলেও ভোলা একটি শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে উঠার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলায় ইতিমধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে এবং উক্ত গ্যাস ব্যবহার করে বর্তমানে ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নতুন করে ২৫০ মেগা ওয়াট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজচলছে। উৎপাদিত পণ্য নৌ পথে এবং সড়ক পথে সহজে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবহণের সুযোগ থাকায় শিল্পায়নের একটি অবারিত দ্বার উন্মোচিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্বৃত্ত কৃষি এবং মৎস্য সম্পদ এ সম্ভাবনাকে আরো ত্বরান্বিত করবে।